গরমটা একটু বেশিই পড়ছে! রোদগরমে আমাদের শরীর যেমন ক্লান্ত হয়ে পড়ছে তেমনি ত্বকও নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। তাই এ সময় ত্বক সুস্থ, সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। কীভাবে? পরামর্শ দিয়েছেন- জারাস বিউটি লাউঞ্জ অ্যান্ড ফিটনেস সেন্টারের বিউটি কনসালটেন্ট ও সিইও ফারহানা রুমি।

লিখেছেন-কেয়া আমান বিউটি কনসালটেন্ট ফারহানা রুমি বলেন, ‘গরমে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের ত্বক। কড়া রোদ, ভ্যাপসা গরম ও ঘামের সঙ্গে ধুলাময়লা মিলেমিশে ত্বক ক্লান্ত, নির্জীব ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। তার ওপর মাত্র ক’দিন আগে শেষ হলো ঈদ। করোনার কারণে ঈদে হয়তো খুব বেশি ঘোরাঘুরি, সাজগোজ করা হয়নি। তবে ঘরেও কিন্তু সাজগোজ কম হয়নি। তা ছাড়া উৎসব ঘিরে টানা কয়েকদিন কাজের ধকলও তো গেছে। সব মিলিয়ে এ সময় ত্বক নিস্তেজ, প্রাণহীন হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে তো আর হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। বরং এ সময় ত্বকের প্রতি বাড়তি নজর দিতে হবে।

খুব বেশি কিছু নয়, দৈনন্দিন সামান্য যত্নেই এ সময় আপনি পাবেন প্রাণবন্ত ত্বক।’ এ সময় ত্বক প্রাণবন্ত, সতেজ রাখতে ফারহানা রুমির পরামর্শ হচ্ছে- ‘গরমে সবসময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে চেষ্টা করতে হবে। বাইরে থেকে এসে ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে ভালোমানের কোনো টোনার ব্যবহার করুন। টোনারটিতে অ্যালকোহলের মাত্রা দেখে নিন। টোনার ত্বকের তৈলাক্ততা কমায়। এরপর ব্যবহার করুন ফেস সিরাম। দিনে ব্যবহার করত হবে ‘ডে ক্রিম’ আর রাতে ব্যবহার করুন ‘নাইট ক্রিম’। খুব গরম পড়লে বাইরে থেকে এসে সুতি কাপড়ে এক টুকরো বরফ নিয়ে তা ত্বকে আলতো করে ঘষে লাগাতে পারেন। এতে ক্লান্তি দূর হয়ে ত্বক সতেজ হয়ে উঠবে। শরীরে এ সময় বেশি মাত্রায় দূষিত পদার্থ বা টক্সিন জমা হতে পারে। তাই ত্বক সতেজ রাখতে গ্রীষ্মে বেশি বেশি পানি পান করুন। ডিটক্স ওয়াটার এ সময় ত্বক ও শরীরের জন্য খুব ভালো।’ রোদে ত্বক পুড়ে কালচে বা তামাটে হয়ে যেতে পারে। তাই এখন রোদে বের হওয়ার আগে মুখ-হাত-পা এবং শরীরের অন্য খোলা অংশে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দীর্ঘসময় বাইরে থাকতে হলে ২-৩ ঘণ্টা পর মুখ ধুয়ে নতুন করে সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন। ওয়াটার প্রুফ সানস্ক্রিনও ব্যবহার করতে পারেন। লক্ষ রাখুন সানস্ক্রিনে সান প্রোটেকশন ফ্যাক্টর এসপিএফ যেন ১৫ কিংবা তার ঊর্ধ্বে হয়।

ফারহানা রুমি বলেন, ‘গরমে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে যায়। এ তৈলাক্ত ভাব দূর করতে টমেটো এবং শসা ব্যবহার করতে পারেন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহার করলেই দারুণ ফল পাওয়া যাবে। টমেটো এবং শসা আলাদা আলাদা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেঁকে বরফ জমানো পাত্রে বরফের মতো জমিয়ে নিন। এরপর সপ্তাহে ৪-৫ দিন শসার কিউব এবং টমেটোর কিউব মুখে আলতো করে ঘষে নিন। টমেটো হলো ন্যাচারাল ব্লিচ যা ত্বক উজ্জ্বল করে এবং ত্বকের বাড়তি তেল শুষে নিয়ে ব্লাক হেডস এবং ব্রণ দূরে রাখে। আর শসা ত্বক পরিষ্কার ও কোমল রাখবে।’ ‘গরমে চোখের নিচের কালচে দাগ দূর করতে রোজ রাতে ঘুমানোর আগে আলুর রস তুলায় লাগিয়ে চোখের কালচে অংশে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিন। শুধু শীতে নয়, এখন গরমেও অনেকের ঠোঁট ফেটে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে সাধারণ লিপ বামের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। অলিভ অয়েলের সঙ্গে নারিকেল তেল এবং সামান্য মধু মিলিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিলে ঠোঁট তুলতুলে নরম থাকবে- বলে জানান বিউটি কনসালটেন্ট ফারহানা রুমি। সাধারণত ত্বকের সতেজতা, উজ্জ্বলতা এবং ময়লা পরিষ্কারের জন্য নিয়মিত ফেসিয়াল করা উচিত। তবে গরমে ত্বকের যত্নে ফেসিয়াল যেন বাধ্যতামূলক। তাই বলে যেনতেন ফেসিয়াল নয়। গরমে ত্বক সতেজ ও সুস্থ রাখতে উপযোগী ফেসিয়াল হচ্ছে নিম, অ্যালোভেরা, গোল্ড, স্পা প্রভৃতি। করতে পারেন ফ্রুটস ফেসিয়ালও। তবে গরমে ফ্রুটস ফেসিয়ালে অনেকের র‌্যাশ উঠতে দেখা যায়। তাই ফ্রুটস ফেসিয়াল করতে চাইলে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন। চাইলে ত্বকের ধরন বুঝে ঘরে বসেই করতে পারেন বিভিন্ন ধরনের সামার ফেসিয়াল। যেভাবে করবেন : প্রথম ভালোভাবে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর আঙুলের ডগায় কিèনজার লাগিয়ে নিচ থেকে ওপরে এবং বাইরে থেকে ভেতরে সার্কুলার মুভমেন্টে ২-৩ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে মুখ মুছে নিন। এবার ফেসিয়াল স্ক্রাব চোখ ও ঠোঁট বাদে ত্বকের অন্য অংশে লাগিয়ে ২ মিনিট ম্যাসাজ করুন। এবার মুখ ধুয়ে গরম পানির ওপরে মুখ রেখে তোয়ালে দিয়ে ঢেকে ভাপ নিন। ৩-৫ মিনিট পর ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে নিন। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী সামার ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার করুন। ১০-১৫ মিনিট পর ভেজা তুলায় টোনার নিয়ে চোখের চারপাশের ত্বক ও ঠোঁট বাদে ত্বকের অন্য অংশ টোনিং করে নিন। সবশেষে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।